বাঘা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘায় শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে। অধিকার সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকায় যে বয়সে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাবে, সে বয়সে তারা জীবিকার তাগিদে হোটেল-রেস্টুরেন্ট, নির্মান, ওয়েলডিং কারখানার , অটো রিকসা-ভ্যান চালানো, পাওয়ার ট্রলী ও ট্রাকটরের হেলপার, দোকান কর্মচারী, হকারিসহ বিভিন্ন ধরনের ঝঁকিপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়েছে। উপজেলায় প্রায় দুই হাজারের মতো শিশু বিভিন্ন কাজে শ্রম দিতে গিয়ে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারগুলোর অধিকাংশ শিশু নুন্যতম বেচে থাকার তাগিদে মূলত এসব ঝুকিপুর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জনা গেছে, উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়ন চরবেষ্টিত এলাকা এবং আনুপাতিক হারে দারিদ্র পরিবারের বসবাস এখানে বেশী। চরাঞ্চলের অধিকংশ শিশুরা পরিবারের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে শ্রম দেয়। ফলে লিখা-পড়ার পরিবর্তে অর্থ উপারর্জনের দিকে বেশী ঝুকছে তারা। এছাড়া উপজেলায় যেসব পরিবারে শিশুশ্রমিক রয়েছে ওই সকল পরিবারের অবিভাবকদের আর্থিক দৈণ্যতা, অশিক্ষিত অবিভাবকদের শিক্ষার প্রতি অসচেনতা, শিশুর বয়স হতে না হতেই অবিভাবকরা নিজেদের সঙ্গে বিভিন্ন কাজে নিয়ে যওয়া, সরকারের উপবৃত্তি প্রকল্প নানা কারণে শিশুদের স্কুলমূখী করতে না পারা, উপবৃত্তির জন্য শিশু নির্বাচনের অনিয়ম অর্থাৎ দুস্থ শিশুদের চেয়ে এলাকার ধনি এবং প্রভাব শালী শিশুরা উপবৃত্তি পওয়া, উপবৃত্তি প্রদানে সরকারের মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা দুর্বল থাকা এবং মাদ্রাসা সমুহে ইব্তেদায়ী পর্য়ায়ে সরকারী ভাবে উপবৃত্তি চালু না থাকা শিশুশ্রমিক বৃদ্ধির কারণ বলে মনে করেন সচেতন মহল। এ ছাড়া বাঘা মডেল, বারো খাদিয়া, চন্ডপুর- সহ একাধিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেন, করোনা ভাইরাস অর্থাৎ কভিড-১৯ এর কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আশঙ্কাজনক হারে শিশুশ্রমিক বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা আরো বলেন, এ ভাবে যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আরো কয়েক মাস বন্ধ থাকে তাহলে ৯-১০ শ্রেনীর অধিকাংশ ছাত্রীর বাল্য বিয়ের মাধ্যমে ঝরে যাওয়ার আশংকা ও করেন তারা। এছাড়া মোবাইল ফোনে গেমের আসক্ত হয়ে বিপদগামী হচ্ছে অনেক ছাত্র ।
দরিদ্র্র পরিবারের অধিকাংশ শিশু পরিবহন পেশার সঙ্গে জড়িত, এছাড়া অধিকাংশ শিশুশ্রমিক মাদকদ্রব্য সেবনসহ নানা ধরনের অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত। ১১ বছর বয়সী শিশু আব্দুল মমিন সিয়াম বলেন, আমাদের কোন মানুষ খাতে দেয়না। বাবা আমাদের খোঁজ নেয়না, মা মানসের বাড়িতে কাজ করে। কি করবো তাই এই কাজ করি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলায় দু’টি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের সর্বত্র প্রায় দুই হাজারের মতো শিশুশ্রমিক রয়েছে। এসব শিশুশ্রমিক চুরি-ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জরিয়ে পড়ছে। চিহ্নিত অপরাধীরা এদেরকে টাকার লোভ দেখিয়ে চুরি-ছিনতাইসহ নানা প্রকার অপরাধমুলক কাজে ব্যবহার করছে। এমনকি চোরাকারবারীরাও বিভিন্ন মাদকদ্রব্য চোরাচালানের কাজে ব্যবহার করছে তাদের।
শিশুশ্রম নিরসন নামে প্রকল্প চালু আছে কিনা জানতে চাইলে, উপজেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা পঙ্কজ কুমার দাস জানান, এই উপজেলায় এর কার্যক্রম চালু নেই। তবে শিশুশ্রম পরিবিক্ষন নামে একটি কমিটি রয়েছে। কমিটির একটি সুত্র জনায়, তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঝুকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে কাজ করছে। উপজেলায় কত হাজার শিশুশ্রমিক রয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সঠিক পরিসংখ্যান আমার জানা নেই। তবে কিছুদিনের মধ্যে সার্ভে করে সঠিক পরিসংখ্যান জানানো যাবে।
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.